somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ। যে জগতে আপনি বেঁচে আছেন, সেখানে অনেক ভালো থাকুন।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন সম্ভবত ক্লাস সেভেন বা এইটে পড়ি। এরমধ্যেই একদিন প্রথম আলোর ঈদসংখ্যায় দেখলাম হুমায়ূন আহমেদের একটা উপন্যাস, নাম ‘আঙুল কাটা জগলু’। বাসায় এই লেখকের অনেক বই আছে, কিন্তু ‘বড়দের বই’ হবার কারণে এসবের অধিকাংশই থাকতো আমার নাগালের বাইরে। প্রথমদিনেই তাই কেউ টের পাবার আগেই এই ‘বড়দের লেখকের’ লেখা উপন্যাস ‘আঙুল কাটা জগলু’ পড়ে ফেললাম। তখন বয়ঃসন্ধি পার করছি, নিজের মধ্যে সবসময় কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগে। এই উপন্যাস পড়ে সেই অস্থিরতা যেন আরও বেড়ে গেলো! বলতে লজ্জ্বা নেই, আঙুল কাটা জগলু পড়ে জীবনের প্রথমবারের মতো আমি সুচিত্রা-উত্তমের যুগের নায়িকাদের মতো বিরহী-বিরহী চেহারার মিতুর প্রেমে পড়ে গেলাম! জীবনের প্রথম প্রেম, সে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না!
অনেক কষ্টে লুকিয়ে লুকিয়ে লেখকের আরও দুই-তিনটা বই পড়লাম। তখন মাথার ভিতরে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে হিমুর কথা। বেঁচে থাকতে হলে আমাকে হিমু হতেই হবে। বাসায় তো আর হলুদ পাঞ্জাবির কথা বলতে পারি না, তাই সমবয়সীদের সাথে দার্শনিক কথাবার্তা বলা আর খালি পায়ে হাঁটা দিয়েই শুরু করলাম। দুই-তিনদিন যেতে না যেতেই দেখা গেলো আমার পায়ে ফোস্কা পড়ে গেছে। ততোদিনে বাসায় আমার হিমুপ্রীতির খবর পৌঁছে গেছে। তখনকার মতো বকাঝকা করে আমার মাথা থেকে হিমুর ভূত সরানো হলো।
এসএসসি পরীক্ষা দেবার পরে বাসা থেকে সবরকম ‘বড়দের বই’ পড়ার অনুমতি পেয়ে গেলাম। একে একে পড়ে ফেললাম জোছনা ও জননীর গল্প, শঙ্খনীল কারাগার, জলিল সাহেবের পিটিশন থেকে শুরু করে মিসির আলি, হিমু সিরিজের প্রায় সব লেখা। মাথায় তখন আবার হিমু হবার ভূত ঢুকলো, সেই ভূত এখনো পুরোপুরি নামেনি।
অনেকেই বলেন হুমায়ূন আহমেদ বাজারি লেখক। তাঁর লেখাকে ‘সাহিত্য’ বলা যায় না, তাঁর জনপ্রিয়তা খুবই সস্তা দরের, ইত্যাদি ইত্যাদি। একেবারেই নিম্নমানের পাঠক হিসেবে এতকিছু আমি বুঝিনা, সত্যিকথা বলতে বোঝার ইচ্ছাও নেই। আমি এটুকু বলতে পারি, হুমায়ূন আহমেদের লেখা দিয়েই আমার নিজের এবং আমার মতো আরও অনেকের বই পড়ার অভ্যাসটার জন্ম হয়েছিলো। হুমায়ূন আহমদের লেখা পড়েই অসংখ্য তরুণ-তরুণী হিমু কিংবা রূপা হতে চেয়েছে। হুমায়ূন আহমদই আমাদের জোছনা দেখতে শিখিয়েছেন। হুমায়ুন আহমেদের সৃষ্ট সংলাপ ‘তুই রাজাকার’ দিয়েই কিছুদিন আগে পুরো বাংলাদেশ কেঁপেছিলো। শুধু বাংলাদেশে কেন, পুরো পৃথিবীতে এমন কয়টা মানুষ আছে যারা সাহিত্য, চলচ্চিত্র, সংগীত সব ক্ষেত্রেই সফলভাবে অবদান রেখেছেন?
ফেসবুকে আজকাল অনেকেই হুমায়ূন আহমেদকে অনুকরণ করে লেখেন। সবাই যে খুব ভালো লেখেন তা হয়তো না, তবে বেশিরভাগই বেশ ভালো লেখা। কিন্তু আমি কেন জানি সেসব লেখা পুরোপুরি পড়তে পারি না। পৃথিবীতে কেউই অন্য কারো মতো না। হুমায়ূন আহমেদের মতো হওয়া হয়তো সহজ, কিন্তু সত্যিকারের হুমায়ূন আহমেদের অভাব পূরণ করা অসম্ভব।
অনেকের মতো আমিও হুমায়ূন আহমেদের চলে যাওয়াটাকে খুব সহজে মেনে নিতে পারিনি। যে মানুষটার লেখা বই দিয়ে পড়ার অভ্যাস শুরু হয়েছিলো, যার তৈরি কাল্পনিক চরিত্রকে অসংখ্য মানুষ নিজের মধ্যে ধারণ করতে চায়; তাঁর চলে যাওয়া মেনে নেয়াটা আসলেই বেশ কঠিন। আমি সবসময় চেষ্টা করি ‘হুমায়ূন আহমেদ নেই’ এই কথাটা মনে না করতে। কেউ যদি নিজের মধ্যে একটা বিশ্বাসকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় তাহলে ক্ষতি কী?
আজ হুমায়ূন আহমেদের ৬৫ তম জন্মদিন। একসময়ে হুমায়ূন আহমেদকে ‘বাজারি লেখক’ বলা অনেকেই আজ বিভিন্ন টক-শো তে ইনিয়ে বিনিয়ে বলবেন হুমায়ূন আহমেদ কত ভালো মানুষ ছিলেন, উনার লেখা বাংলা সাহিত্যে কতটুকু অবদান রেখেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। হুমায়ূন আহমেদের জন্য আসলে এসবের প্রয়োজন নেই। হুমায়ূন আহমেদকে এসব দিয়ে মাপা যায় না। হুমায়ূন আহমেদকে মাপার জন্য মনেহয় একটাই স্কেল আছে, সেটা হলো মানুষের ভালোবাসা।
পৃথিবীর আকাশে আজ খুব বেশি চাঁদের আলো নেই। হুমায়ূন আহমেদ যেখানে আছেন, সেখানকার আকাশ নিশ্চয়ই চাঁদের আলোয় প্লাবিত হচ্ছে।
শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ। এই মুহূর্তে আপনি যেখানে বেঁচে আছেন, সেখানে আপনার বেঁচে থাকা অনেক ভালো হোক।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×